শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৪:১৯ অপরাহ্ন
সুন্দরগঞ্জ প্রতিনিধি ঃ ষষ্ঠ শ্রেণি হতে একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত দীর্ঘ ৬ বছর প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে সীমাহীন কষ্ট সহ্য করে তিনটি সাঁকো পাড়ি দিয়ে লেখাপড়ার জন্য স্কুল ও কলেজে যাওয়া আসা করছেন বলেন, তারাপুর ইউনিয়নের লাঠশালা চরের শিক্ষার্থী মমেনা খাতুন। তিনি বলেন, ছাত্র জীবনে কোন সময়ের জন্য ভাল জামা কাপড় পড়ে স্কুলে যেতে পারি নাই, পানি এবং ধুলার জন্য। ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকার কারণে চরের মানুষের জীবনমান অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে।
সারাবছর চরের মানুষের চলাচলেরর জন্য রাস্তাঘাটের কষ্টচিত্র তুলে ধরে নিজ ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দিয়েছেন রংপুর বিভাগীয় মানব কল্যাণ ফান্ডেশনের সভাপতি কবি ও সাহিত্যিক নাসরিন বেগম নাজ। তিনি বলেন আজ বাস্তব এক অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে হাঁটলাম ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার পথ। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার মীরগঞ্জের বাজার হতে তারাপুর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর লাঠশালা চরের মধ্যে দিয়ে তিস্তা সোলার প্লানে। বালুর এই রাস্তাটি এতো বেশি অনুন্নত যা বলে বুঝানোর মত নয়। ডিজিটাল বাংলাদেশের উন্নয়ের কথা ভাবলে এই এলাকাটি দেখলে লজ্জা হয়। এখানকার সম্ভাবনাময় তরুন-তরুনীদের জীবনমান রাস্তাঘাটের কারণে শত বছর পিছে পড়ে রয়েছে। রাস্তাঘাটগুলো এতো বেশি বালু ও ভাঙা যেখানে মোটরসাইকেল, ভ্যান, অটো নিয়ে চলাচল করাও কঠিন। কাউকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হলে চরের মানুষ কি করেন, সেটি জানিনা। ভাঙা বাশ ও কাঠের ব্রিজ পার হয়ে বেশ কিছু পথ হাটার পর পাকা রাস্তার দেখা মিললো। তিনি চরের মানুষের জীবনমান ও রাস্তাঘাটের উন্নয়নের এনজি সংস্থা, সরকারি দপ্তরের দৃষ্টি আর্কশন করেন। সেই সাথে গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতি চরের কষ্টচিত্র তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশের অনরোধ করেন।
জানা গেছে, উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তার গতিপথ পরিবর্তন হয়ে অসংখ্য নালা ও শাখা নদীতে রুপ নিয়েছে। ওইসব নালা ও শাখার ওপর দিয়ে চলাচলের জন্য প্রতিবছর নির্মাণ করতে হয় বাঁশ বা কাঠের সাঁকো। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এবং চরবাসির উদ্যোগে প্রতিবছর নির্মাণ করতে হয় বাঁশ বা কাঠের সাঁকো। তা না হলে চরের মানুষ হাট-বাজারসহ উপজেলা শহরে আসা যাওয়া করতে পারে না। এছাড়া স্কুল কলেজগামি শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্ট করে প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। ছয়টি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের শাখা নদী ও নালার ওপর অন্তত ৩০০টি বাঁশ বা কাঠের সাঁকো এবং টার রয়েছে। নড়বড়ে বাশের সাঁকো যেন চরের মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা।
প্রতিবছর বন্যার সময় শাখা নদী বা নালার ওপর চরের মানুষের চলাচলের জন্য সাঁকো এবং টারগুলো নষ্ট হয়ে যায়। সে কারণে প্রতিবছরেই তা মেরামত বা নতুন করে নির্মাণ করতে হয় বলেন তারাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ ও ব্যক্তিগত অর্থায়নে চরবাসির স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এসব সাঁকো বা টার নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি সাঁকো নির্মাণে প্রায় ৩০ হতে ৬০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। এছাড়া বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা তাঁর ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি সাঁকো নির্মাণ করে দিয়েছেন। চরের মানুষের চলাচলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্থানে ব্রিজ বা কালভাট নির্মাণ এখন সময়ের দাবি।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক বলেন, নদী ভাঙন রোধে তাৎক্ষনিক ভাবে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলা এবং বাঁধ সংস্কারের কাজ পানি উন্নয়ন বোর্ড করে থাকে। নদী খনন, ড্রেজিং এবং শাসন এসব বড় বড় প্রকল্পের বিষয়। এটি উপর মহলের সিদ্ধান্তের ব্যাপার।