বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৪৩ অপরাহ্ন
সুন্দরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সুন্দরগঞ্জে পাটের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দেয়ায় কৃষকদের মনে হাসি-খুশি ভাব বিরাজ করছে। বুক ভরা আশা করছেন এবার বুঝি লাভবান হবেন। এ উপজেলায় কৃষকরা পাটের বীজ বুনন শুরু করেছেন চৈত্র মাসে। প্রচন্ড খরায় তারা সেচ দিয়ে পাটের জমি তৈরি করে বীজ বুনন করেছেন। তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের চরের কৃষকরাই পাটের আবাদ করেছেন বেশি। আর উচু এলাকার কৃষকরা বৈশাখের বৃষ্টির উপর নির্ভর করে পাট চাষ করেছেন। চর এলাকায় আগাম আবাদের কারণ হল আষাঢ় শ্রাবণ মাসে বন্যার পানি আসার আগে যেন পাট কাটা শেষ হয়।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ৪ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ অর্জিত হয়েছে। এর মধ্যে দেশি ৬০ হেক্টর ও তোষা ৪ হাজার ১১০ হেক্টর। তোষা পাট ও -৭২ এবং ও-৯৮৯৭ জাতের। যা গত বছরের তুলনায় ৪০০ হেক্টর বেশি। সম্ভাব্য উৎপাদন প্রতি হেক্টরে পাট ২.৭ মেট্রিকটন। গত ২ বছর থেকে চাষিরা পাটের দাম ভাল পেয়েছে। এ বছরও ভাল দাম পাবে এ আশা নিয়ে কৃষকরা হিসেব কষছেন অতীতের আবাদের চেয়ে লাভ বেশি হবে। পাটের আবাদ বেশি হয়েছে চরাঞ্চলগুলোতে। এখন মাঝে-মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে যা পাটের জন্য খুবই উপকারি এবং বাম্পার ফলনের সম্ভাবনাই বেশি। সারের অভাব না থাকায় সঠিক সময়ে জমিতে সার দিতে পেরেছে কৃষকরা। বৃষ্টি হওয়ার আগে বৈশাখের প্রচন্ড খরায় কিছু-কিছু জমিতে সেচ দিয়েছে কৃষকরা যার ফলে এখন শ্যামল সবুজের সমারোহ ঘটেছে ক্ষেতে। সতেজ পাট প্রতিদিনই বেড়ে উঠছে। ইতোমধ্যেই অনেক জমির পাট ৭/৮ ফুট করে লম্বা হয়েছে।
পাট চাষে কৃষকদের আগ্রহের কারণ হলো ২/৩ ফুট লম্বা হওয়া পর্যন্ত শাক হিসেবে খেতে পারেন। যা থেকে শরীরের ক্যালরির ঘাটতি পুরণ হয়। পাট খড়িও বাজারে বিক্রি করে যথেষ্ঠ আয় করা যায়। বেশির ভাগ কৃষকই সাংসারিক চাহিদা পূরণের পর অবশিষ্ট পাট খড়ি বাজারে বিক্রি করেন। খোর্দ্দার চরের কৃষক মোস্তাক আহম্মেদ জানান, এ বছর ৫ বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছেন। পাটের কচি পাতা তুলে শাক হিসেবে খেয়েছেন যাতে তরকারীর বাজার খরচ হয়েছে কম। পাট পঁচানোর পর সোনালী আশ বিক্রি করে পরবর্তীতে পাট খড়ি বিক্রি করেও যথেষ্ট আয় করবেন বলে তার আশা। হরিপুর চরের কৃষক সাজু মিয়া জানান, ধান, চাল ও গমের মতো যদি সরকার কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি পাট ক্রয় করত তাহলে কৃষকরা লাভবান হতো বেশি। তিনি আরো জানান, ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট তৈরি করে পাটের বাজার নিয়ন্ত্রণ করায় বিশাল অংকের লাভটা চলে যায় তাদের কাছে। তাই ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা যাতে সিন্ডিকেট তৈরি করতে না পারে সেদিকে নজর রাখা দরকার। তারাপুর চরের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, পাটের আঁশ বাজারে বিক্রি করে একবারে মোটা দাগের টাকা পাওয়া যায়। এ টাকা দিয়ে এবারে ঘরের সৌখিন আসবাবপত্র কেনার আশা তার। খোর্দ্দার চরের কৃষক রফিক জানান, আমি পাট কেটেছি। পাটের ছাল ভাল হওয়ায় গত বছরের চেয়ে এক বিঘাতে ৫০ আটি বেশি হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সৈয়দ রেজা-ই-মাহমুদ জানান, উপজেলার কাপাসিয়া, হরিপুর, তারাপুর, বেলকা, শ্রীপুর ও চন্ডিপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলগুলোতে এ বছর পাটের আবাদ হয়েছে বেশি। চাষিদের সবসময় বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হয়। পরামর্শ মোতাবেক যারা চাষ করেছেন তাদের ফলন খুব ভাল হয়।