বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৮ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ চলতি বছরের ভয়াবহ বন্যার ধবল কাটিয়ে চরা দামে আমনের বীজ সংগ্রহ করে জমিতে রোপন করেও স্বস্তির নি:শ্বাস নিতে পারছেন না গাইবান্ধার আমন চাষীরা। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না থাকায় ইঞ্জিলচালিত শ্যালোমেশিন ও বৈদুতিক পাম্প দিয়ে প্রতি ঘন্টা ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় ফসলে পানি দিতে হচ্ছে । উৎপাদন খরচ শেষে ধান বিক্রি করে বিঘা প্রতি কি পরিমান লোসকান গুনতে হবে । একেই তো ধানের দাম কম, তার পরে আবার রোদের তীব্রতায় আমন ক্ষেতসহ মাঠ-ঘাট ফেটে চৌ-চির ।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের সোনাই ডাংগা গ্রামের কৃষক ওয়াহেদুল ইসলাম ধার দেনা করে চরা দামে ৫ বিঘা বিঘা জমিতে আমনের আবাদ করে মহাবিপদে পরেছেন । তিনি ধারনা করেছিলেন যে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হবে বৃষ্টির পানিতেই আমনের আবাদ হবে কিন্তু সেই ধারনা কাজে লাগে নি । টানা ১ মাসেও এ উপজেলায় তেমন কোন বৃষ্টি হয় নি ফলে ১০০ টাকা ঘন্টা হিসাবে পানি সেচ দিয়ে আমনের আবাদ করতে হচ্ছে । ওই গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম জানান, চরা দামে আমন ধানের চারা কিনে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা ঘন্টা পানি সেচ দিয়ে যে পরিমান ধান হবে তা বিক্রি করে উৎপাদন খরচ তোলা সম্ভব না । তাই ৩ বিঘা পরিত্যক্ত রেখেছেন আমনের চাষ করেন নি । এই ইউনিয়নের তালুক সোনাইডাংগা গ্রামের কৃষক মাহবুবুর রহমান জানান, পানির অভাবে বৃষ্টির পানে চেয়ে থেকে জমি ফেটে চৌচির অবস্থা । তাই ৭০ টাকা লিটার ডিজেল কিনে ইঞ্জিলচালিত শ্যালোমেশিন দিয়ে সেচের মাধ্যমে জমিতে পানি দিতে হচ্ছে । সাঘাটা উপজেলার তেলিয়ান গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান জানান, চার মণ ধান বিক্রি করে ১ পোন আমন ধানের চারা কিনে জমিতে রোপন করে কি লাভ হলো । ধার দেনা করে কৃষাণ, সার, কৃটনাশক ঔষধ দিয়ে এখন প্রতিদিন সকাল বিকাল দেড় থেকে ২ ঘন্টা জমিতে পানি দিতে হচ্ছে । এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে । তার মতো শত শত কৃষক এবছর আমনের আবাদ করে প্রকৃতির বিরুপ আচরনে অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতি গ্রস্ত হচ্ছে ।
একই চিত্র গাইবান্ধা জেলার ৭ উপজেলার হাজার হাজার কৃষকের। পলাশবাড়ীর হরিনাবাড়ী এলাকা ঘুড়ে দেখা যায় সেখানকার কৃষক বন্যার পানি শুকে গেলেও এখনো আমনের চাষ করেন নি পানির অভাবে । এছাড়ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের কৃষকরা চরা দামে আমনের চারা কিনে আবাদ করে প্রতি ঘন্টা ১০০ টাকা হিসাবে সেচ দিয়ে সঙ্কায় আছেন । কারন টানা বৃষ্টিতে আগামীতে বন্যার সম্ভাবনায়র কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর । তাই বন্যার সঙ্কায় কৃষকরা মনোযোগ দিয়ে নিম্নাঞ্চলের জমি গুলোতে বেশী খরচে সেচ দিতে আমনের চাষ করার সাহস পাচ্ছেন না ।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসরণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. ফেরদৌস জানান, সাম্প্রতিক বন্যায় গাইবান্ধা জেলায় মোট ৭ হাজার ৫শ ২০ হেক্টর জমির আমন ধানের ক্ষেত সম্পুর্ন নষ্ট হয়েছে। কৃষকদের ক্ষতি লাঘব করতে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদেও মাঝে বিনামুল্যে আমনের বীজ দেয়া হচ্ছে । এব ছর ১ লক্ষ ২৩ হাজার ৬৭ হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষমাত্র নির্ধারন করা হলেও বন্যার কারনে লক্ষমাত্র পুরন করা সম্ভব হচ্ছে না । তবে কৃষকদের আগ্রহ থাকার ফলে আমরা আশাবাদী আমন চাষের লক্ষ মাত্র পুরন করতে পারবো । আবহাওয়া বিষয়ে বগুড়া আঞ্চলিক আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ সজিব হোসাইনের সাথে মুঠো ফোনে কথা বলে তিনি জাগো নিউজকে জানান, বঙ্গপোসাগরে লঘুচাপের ফলে বগুড়া, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে । গাইবান্ধাতেও যে কোন সময় বৃষ্টিপাত হতে পারে ।