বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১১:৪৪ পূর্বাহ্ন

গোবিন্দগঞ্জে আর্থিক লাভের আশায় প্রতি বছর বাড়ছে ক্ষতিকর তামাক চাষ

গোবিন্দগঞ্জে আর্থিক লাভের আশায় প্রতি বছর বাড়ছে ক্ষতিকর তামাক চাষ

গোবিন্দগঞ্জ প্রতিনিধি ঃ গোবিন্দগঞ্জে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ও আর্থিক লাভের আশায় প্রতি বছর বেড়েই চলেছে তামাকের চাষ। তামাক পাতা প্রক্রিয়াজাত করন কাজে নানা স্বাস্থ্য ঝুঁকি জেনেও শুধু লাভের আশায় এই ক্ষতিকারক ফসল চাষ করতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন এ উপজেলার কৃষকরা। কোন ভাবেই তামাক চাষ বন্ধ না হওয়ায় এবং বাতাসে তামাকের নিকোটিন মিশে যাওয়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তামাক চাষিসহ সাধারণ মানুষজন।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় বিগত বছরগুলোতে খুব অল্প জমিতে তামাকের চাষ লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু বর্তমানে বেশি লাভের আশায় বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকরা অধিক হারে তামাক চাষে ঝুঁকে পড়ছে। উপজেলার কাটাবাড়ী, সাপমারা, দরবস্ত, হরিরামপুর, নাকাই, রাখালবুরুজ, তালুককানুপুর, শিবপুর, কোচাশহর, কামারদহ, গুমানীগঞ্জ, মহিমাগঞ্জ ও শালমারা ইউনিয়নে প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে তামাকের চাষ। করতোয়া নদীর চর এলাকায় এই তামাক চাষে বেশি ঝুঁকে পড়ছে চাষিরা। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় প্রচলিত বিভিন্ন ফসলের তুলনায় কৃষক পর্যায়ে তামাকের আবাদ সম্প্রসারণ ঘটছে। তামাক চাষ ও প্রক্রিয়াজাত করনে স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হলেও এ চাষ আবাদে নিরাপদ সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণে সচেতন নন চাষিরা। সরেজমিনে ওইসব এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে তামাক রোপন ও পরিচর্যার ক্ষেত্রে চাষিরা কোন ধরণের সুরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করছে না। এ ছাড়াও ক্ষেত থেকে তামাক পাতা উত্তোলনের সময় হাতে গ্লোবস ও মুখে মাস্ক ব্যবহার করছেনা তারা। জমি থেকে তামাক পাতা তুলে খোলা উম্মুক্ত স্থানে শুকানোর ফলে বাতাসে মিশছে তামাকের পাতায় থাকা ক্ষতিকর নিকোটিন।
সাপামারা ইউনিয়নের খামারপাড়া গ্রামের মতিয়ার রহমান সরদার জানান, তামাক আবাদ ও প্রক্রিয়াজাত করনের সময় চাষিরা শারীরিক নানা সমস্যার শিকার হচ্ছে। এর মধ্যে শ^াস কষ্ট, হাত পায়ে ঘা, খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া অন্যতম। এ ছাড়াও অনেক সময় ভাত খেতে তিতা লাগে- কিন্ত এ ক্ষেত্রে করার কিছুই নেই। কারণ নির্ধারিত মূল্যে তামাক বিক্রির নিশ্চয়তা রয়েছে- যা অন্য কোন ফসলে নেই। এ জন্য তামাক আবাদ কৃষকরা ছাড়তে পারছেনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দরবস্ত ইউনিয়নের রামনাথপুর, গোশাইপুর, দুর্গাপুর ও বিশ^নাথপুর গ্রামের তামাক চাষিরা বলেন, আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি জেনেও আমরা তামাকের চাষ করছি।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মাসুদার রহমান আকন্দ জানান, তামাক চাষের ফলে ফসলি জমির মাটি পরিবেশ ও মানবদেহের নানা ধরণের ক্ষতির পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার মেহেদী হাসান বলেন, এ বছর উপজেলায় প্রায় ৬ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা ও মাঠ কর্মীরা তামাক চাষ কমাতে কৃষকদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে তাদেরকে তামাক চাষ কমাতে প্রতিনয়িত কাজ করে যাচ্ছে। সরকারী-বেসরকারীভাবে তামাক চাষের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে কৃষকদের সচেতন করার মাধ্যমে তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করতে পারলে অধিক খাদ্য উৎপাদনের পাশপাশি স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমবে বলেও তিনি জানান।

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com